Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন

পাতা

উপজেলার ঐতিহ্য

মাগুরা শহরে কাত্যায়ণী উৎসব

শারদীয়া পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাত্যায়ণী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটা নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়। সর্ব সত্মরের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল সত্মরের এই মানুষ এই পূজা ও উৎসব উপভোগ করে। কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই উৎসবের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন রকম বর্ণময় প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। যেমন- সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন রকম পণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটা শুধু উপভোগ্য অনুষ্ঠানই নয়, বরং দেশের বিভিন্ন প্রামত্মর থেকে আসা ব্যবসায়ীগণ অর্থনৈতিকভাবে লাভ হয় এবং এই পরিবেশ তারা আনন্দের সাথে উপভোগ করে। সর্বোপরি কাত্যায়ণী পূজার জন্য সকল মানুষেরা অপেক্ষা করে। যারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গভীরে অনুসন্ধান করতে চায়, তাদের জন্য এটা বড় একটা সুযোগ। যদি কেউ মনে করে বাংলাদেশে দূর্গা পূজা হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব তবে তাদের জন্য বড় একটা বিস্ময়ের খবর আছে। কাত্যায়ণী পূজা মাগুরার হিন্দু সমাজের জন্য প্রধান উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয় এখানে এটা এত জাঁক জমকের সাথে উদযাপন করা হয় যে, উপমহাদেশের কোথাও এইভাবে উদযাপন করা হয় না। দূর্গাপুজার এক মাস পরেই এ পূজা উদযাপন করা হয়। কাত্যায়ণী পূজার প্রতিমা গুলো দূর্গা পুজার প্রতিমার অনুরূপ হয়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে দাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার পূর্বে তার পিতা মাতাদের পৃথিবীতে পাঠায় দেবকি ও বাসুদেব নামে। গোকুল নগর অধিবাসী নন্দ ঘোষের স্ত্রী যশোধর সমত্মান হিসেবে পালিত হন। দাপর যুগে গোপীনীরা রাধার বিরহ ব্যথায় শ্রীকৃষ্ণকে পেতে এক মাস ব্যাপী কাত্যায়ণী ব্রত পালন করে। দেওয়ালীর শুরুতে হয়েছিল। এটা যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ব্রত পূজায় প্রতিমা গুলো তৈরী করা হয় এটা দেবী দূর্গার প্রতিমার অনুরূপ কিন্তু দেবীর কোলে শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি থাকে। যেহেতু দেবী দূর্গার আর এক নাম দেবী কাত্যায়ণী সেই থেকে। যাহোক মাগুরা সদরের পারনান্দুয়ালী গ্রামের ধর্ম পরায়ণ ধনাঢ্য ব্যক্তি প্রয়াত সতীশ চন্দ্র সরকারের স্বপ্নদ্রষ্ট্র হয়ে প্রায় ১৯৫৩ সালে মাগুরায় প্রথম এই পূজা জামজমকভাবে শুরু করেন। এরপর থেকে মাগুরায় হিন্দু সমাজে এই পূজা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায়ত সতীশ সরকার (মাঝি) পাকিসত্মানের শেষ দিকে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে পারনান্দুয়ালী গ্রামে ঐতিহ্যপূর্ণ কাত্যায়ণী পূজার আভিজাত্য ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করে। বাংলাদেশ হওয়ার পর নতুন আঙ্গিকে দেবু প্রামাণিকের ছেলে রূপায়ন ষ্টুডিওর ম্যানেজার ও ফটোগ্রাফার অসিত প্রামাণিকের জায়গায় কালা সাধুর বাড়ীর পাশে কানু বৈরাগীর উদ্যোগে ১৯৭৩ সালে কাত্যায়ণী পুজা শুরু হয়। এই জায়গায় ৪/৫ বছর হওয়ার পর জায়গা বিক্রি হয়ে গেলে এখান থেকে বাবু মণিমোহন সাহা (চুনু বাবুর বাড়ীর সামনে) বছর চারিক হয়। তার এখান থেকে স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে জায়গা পরিবর্তন হয়ে উদয় সাহার বাড়ীর পাশে দীর্ঘ দিন প্রায় ২৫ বছর মতোন হয়। এরপর পুনরায় জায়গার পরিবর্তন হয়ে বর্তমান নিমাই পাল মহাশয়ের জায়গায় কাত্যায়ণী পূজা চলমান। স্মৃতি সংঘের প্রায় সমসাময়িক সময়ে নিজনান্দুয়ালী মজুমদার বাড়ীর সামনে কালী বটতলা প্রাঙ্গণে জাকজমকতার সাথে কাত্যায়ণী পূজা শুরু হয়। ১৯৮২ সালে বর্তমান নিতাই পৌর গোপাল সেবাশ্রমের পাশে মন্টু শিকদার মহাশয়ের জায়গায় কাত্যায়ণী পূজা চলছে। এখানে প্রধান উদ্যোগী ছিলেন প্রথম দিকে চঞ্চল বাবাজী, দীপক দত্ত, মন্টু শিকদার, প্রিয় নাথ রুদ্র (জয় নিতাই), জয়মত্ম রুদ্র প্রমূখরা। এরপর কয়েক বছর পূর্বে কান্দা বাসকুঠা গ্রামে বারোয়ারী কাত্যায়ণী পূজা হয়েছিল। পরবর্তীতে এ কমিটি নিজনান্দুয়ালী কমিটির সাথে যুক্ত হয়। পার্শ্ববর্তী বাড়িয়ালা গ্রামে নির্মল সরকার (মাঝি) এ বাড়ীতে এ পূজা শুরু হয়। যা এখনও চলছে। ঠিক এক সময়ই জামরুল তলা পূজা মন্ডপে শিকদার চিত্তরঞ্জন শিকদার, রতন লাল সাহা, শিক্ষক গোপাল শিকদার, রতন লাল সাহা, শিক্ষক, গোপাল শিকদার প্রমূখদের সহযোগিতায় কাত্যায়ণী পূজা শুরু হয়। যা এখনও চলছে। ৯০ এর দশকে দরি মাগুরা ছানাবাবুর বটতলা প্রাঙ্গণে সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে মনিন্দ্র নাথ দে (ছানাবাবু) হরকিংকর সাহা, শিক্ষক নির্মল কুমার সাহা, প্রফেসর কৃষ্ণ পদ সেন, রবীন্দ্র নাথ সাহা, শ্যামল দাম, অশোক সেন প্রমূখদের সহযোগিতায় এবং ছানাবাবুর পৃষ্ঠপোষকতায় কাত্যায়ণী পূজা শুরু হয় যা আজও বিশাল বাজেটে জাকজমকতায় চলছে। এ পূজাকে ঘিরে বিশাল ফার্ণিচার মেলা কুঠীর শিল্পের হরেক পশরায় আগত ভক্তদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। এ ২০০০ সালের পর সাতদোহা ল্যাংটা বাবার আশ্রমে নতুন করে শুরু হয় এবং এই এক সময়ে কুকনা ঘোষ পাড়ায় এ পূজা শুরু হয়। বর্তমানে এ পূজার চল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী আলমখালী বাজারে এ বছর তিনখানা প্রতিমা হচ্ছে। রামচন্দ্রপুর, হাজিপুর, গঙ্গারামপুর, বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক উদ্দীপনার সাথে শুরু হয়েছে। এই পূজার সাথে সাথে কাশিবালা বর্মণ (মাঝি) বেলতলা প্রাঙ্গণে শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা হচ্ছে। মূলতঃ জগদ্ধাত্রী পূজা নিজনান্দুয়ালী, আঠারোখাদা, কলকলিয়া পাড়া সেন বাড়ী,বাটিকাডাঙ্গা বৈদ্য বাড়ীসহ একাধিক ব্যক্তির উদ্যোগে জগদ্ধাত্রী পূজা বেশ ব্যয়বহুল বাজেটে হচ্ছে। এই উৎসব আড়ম্বর এর সাথে উদযাপিত হয়ে আসছে। সময়ের সাথে কাত্যায়ণী ব্রত পূজা হিসেবে মাগুরার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব এবং মাগুরার ঐতিহ্য মনে করা হয়, তবে এর সীমাবদ্ধতা কেবল মাগুরার মধ্যে নয় ভারত ও নেপালের ধর্ম পরায়ণ লোকের কাছে এই পূজা খুবই আকর্ষণীয়। কাত্যায়ণী পূজার সময় সকল পূজা মন্ডপগুলি নানা রঙে্ ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ মাসব্যাপী মেলা এই উৎসবকে আরো উৎসবমূখর করে তোলে। মন্ডপের প্রবেশ দ্বার নয়নাভিরাম ভাবে সজ্জিত করা হয় এবং কিছু কিছু স্থানে বিভিন্ন নিদর্শন তৈরী করা হয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ৫ দিনের এই অনুষ্ঠান মাগুরাবাসীর জীবনে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে। বর্তমানে এই পর্যায়টি আরম্ভর পূর্ণ হয়েছে কারণ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই অনুষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। সূদুর কলিকাতাসহ বাংলাদেশের নানা প্রামত্ম থেকে এই অনুষ্ঠান ও মেলা উপভোগ বা দেখতে আসেন। মাগুরার হিন্দু সম্প্রদায়ের বর্ষিয়ান ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানা যায় যে, এত বড় করে উপমহাদেশের কোথাও জামজমকভাবে এই পূজা এইভাবে উদযাপন করা হয় না।

 

তথ্যসূত্রঃ

মাগুরা জেলার ইতিহাস গবেষক ডাঃ কাজী তাসুকুজ্জামান ও কাজী হিনুকা পারভীন।

 

গাবতলার মেলা

আনুমানিক ১৯০০-১৯০১ সালে মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গাবতলা নামক স্থানে স্থানীয় জমিদারদের সহায়তায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো।পরবর্তীতে ৪ বছর পর এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় মেলা।বর্তমানে এই মেলা জাকজমকের সাথে ৩দিন ব্যাপী পালিত হয়।

ছবি