খেলাধূলা ও বিনোদন |
প্রতিটি জনপদেই মানুষ তার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার মাধ্যমে তার অতীত সমাজজীবন থেকে নানা ধরণের ক্রীড়ার বহুমাত্রিক অনুশীলনের ধারা বহন করে থাকে। ঠিক যেন রিলে রেসের কাঠি যোগানো ও এগিয়ে চলার মত। স্বাভাবিকভাবেই মাগুরা সদর উ্পজেলার জনসমাজ এই ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। মাগুরা সদর উ্পজেলার সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে এই জেলার ক্রীড়া ঐতিহ্য যুক্ত হয়ে আছে। তবে এর আগে জেলার লিখিত ক্রীড়ার ইতিহাস খুজে পাওয়া যায় না। মাগুরা সদর উ্পজেলার ক্রীড়া ইতিহাস অতি সম্প্রতি কালের। সম্প্রতিকালের ক্রীড়া ইতিহাসের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখার মাঝ দিয়েই ফুটে উঠবে এই জনপদের ক্রীড়া এবং ক্রীড়াঙ্গনের ইতিকথা। ফুটবলঃ সন্দেহ নেই যে ফুটবলই এই জনপদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় খেলা। পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে যারা ফুটবল অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় দলের খ্যাতিমান খেলোয়াড় ছিলেন- কাজী আহসানুজ্জামান বাদশা (মারদেকা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী), কাজী আশিকুজ্জামান বাকু, বাকী, শাজাহান, বাটুল, মতলা, পাতলা, রহমান, কুমারেশ, হিরু মুন্সি, ঘিরু মুন্সি, রিয়াজুল, হবি, বাবু মিয়া, কিবরিয়া, হোমন ইত্যাদি কৃতি ফুটবলাররা স্থানীয়ও জাতীয় পর্যায়ে সুনামের সাথে ফুটবল খেলেছেন। প্রায় একই সময়ে কাজী সাইফুজ্জামান (মন্নু কাজী) কলকাতার এরিয়ান ক্লাবের পক্ষে ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ ও হুইলার শিল্ডের খেলায় অংশ নিয়ে জনপদ আলোকিত করেছেন। এছাড়া কিংবদন্তী সমতূল্য ফুটবলার খবির (ঢাকা পি,ডাবলু,ডি ক্লাব), পিকুল, মোহন, পান্না, সোহরাব, মোহন-২, কানু দত্ত, টোকন, মানিক, বৃন্দাবন, পি. সেন, শান্তমিত্র, হাজীকুল হক, এনছো, বুড়ো, ঝন্টু মুন্সি, ফজু, বিষু ভট্টাচার্য, ভোলানাথ, নৃপেন, মহিউদ্দিন, সোমনাথ, মন্টু বৈদ্য, কে. দত্ত, সিদ্দিক, স্বপন মুখার্জি, শহীদ লুতু (যার নামে শহীদ লুতাশ সংঘ), বাকু, নান্তু প্রমুখ নামকরা ফুটবলারগণ মাঠ কাপিয়েছেন সমহিমায়। এর পরের প্রজন্মের বাংলাদেশ জাতীয় দলের কৃতি ফুটবলার লোভন ইরান ও থাইল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ ছাড়াও ঢাকা বি.জে.এম.সি ক্লাবের হয়ে খেলে একজন সফল স্ট্রাইকার হিসেবে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেছেন। কাজী ফিরোজ গোলরক্ষক হিসেবে প্রায় এক দশক ঢাকা প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলিতে খেলে তার স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব, সূর্যসেন হলের ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ও ফিফা কোচ এবং ফুটবল সংগঠক হিসেবে সাফল্যজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একইসাথে আনোয়ার, মকবুল হোসেন, আবুল আসাদ, নান্নু, জাফর, কামাল, হারুন খান বাঙ্গালী, জিলু, বুলু, রাজু, লিটু পরবর্তীতে মোস্তফা (বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড়), ছোট মোহন, কুটিল, কোমল, আশরাফ, লাজুক, সোহান, রঞ্জু, আহম্মদ, ফরিদ, কদর, পুংকি, ইউনুস (বিকেএসপি), বার্কি (বিকেএসপি), আলিম খান, আমিনুর, ঝুকু, কটা, সবুজ, সৈনিক, নুরুল ইসলাম প্রমুখ ফুটবলারগণ ঢাকা, খুলনা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলে মাগুরার ফুটবল ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ফুটবলে মাগুরার সবচেয়ে বড় সাফল্য বয়ে এনেছেন মেহেদী হাসান উজ্জ্বল। বাংলাদেশ জাতীয় যুবদলের অধিনায়ক হিসেবে থাইল্যান্ড, সৌদিআরব সফর করেন। কুয়েতের বিরুদ্ধে গোল করে বাংলাদেশের ফুটবলকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে ঢাকা অবাহনীর হয়ে ঢাকা লীগের তারকা ফুটবলার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।গত সাফ ফুটবলে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলেছেন। ক্রিকেটঃ মাগুরা জেলার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেট ক্লাবে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন- সৈয়দ বাচ্চু, হাশিম ও কাজী ফিরোজ, তিমির। ক্রিকেট কোচ বাপ্পী (বিকেএসপি) ঢাকা আবাহনীর হয়ে বিশ্ব খ্যাত অলরাউন্ডার ওয়াসীম আকরামের সাথে খেলে প্রভূত সুনাম অর্জন করেছেন। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান মাগুরাই সন্তান। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে আসীন করেছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এবং বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভলিবলঃ ভলিবল এই জনপদের বহুল প্রচলিত একটি খেলা। এই জনপদে ভলিবল খেলাকে যারা জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেইসব কৃতি খেলোয়াড়বৃন্দ হলেন- পন্ডিত আঃ গফুর, মন্নু কাজী, মোহন, ওহাব মুন্সি, বুড়ো মীর ও নান্না কাজী। পরবর্তীতে কাজী ফিরোজ (ঢাকা প্রথম বিভাগ ভলিবল লীগের খেলোয়াড়), বাকের, নান্নু প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য মাজেদ বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে দেশে বিদেশে খেলে প্রভূত সুনাম অর্জন করেছেন। |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস